জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস- জনগণের জন্য রাষ্ট্র – ক্ষমতার প্রয়োজনে জনগণ নয় ?
আমি গত কয়েকদিন যাবত ভাবছি আসলে কি হল? কেনই বা এমন হলো? বিষয়টা হলো গত কয়েক দিন আগে যুক্তরাজ্যে হয়ে যাওয়া রেফারেন্ডাম বিষয়ে। মানুষের সাথে কথা বলে যেটা বুজলাম তার কিছুটা তুলে ধরলাম।
প্রথমে দেখা যাক ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কি এবং কেনো ?
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন- যাকে আমরা EU বলেই জানি- মূলত দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ রাজনৈতিক ঐক্য এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি কে সামনে রেখে গঠিত হয়েছিল। বর্তমানে ২৮টি দেশ এই সংগঠনের এর সদস্য। এর নিজস্ব মুদ্রা আছে। এর নাম ইউরো। এই পর্যন্ত ১৯টি দেশ এই মুদ্রা ব্যবহার করে আসছে। এর নিজস্ব পার্লামেন্ট আছে। যেটা ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নামে পরিচিত। এটা ব্রাসেলস এ অবস্থিত। এই পার্লামেন্ট আইন ও নীতিমালা প্রনয়ন করে থাকেন। বর্তমানে পার্লামেন্ট এর কর্ম পরিধি অনেক ব্যাপক-যেমন বানিজ্য, পরিবেশ, যোগাযোগ, কনসিউমার রাইটস ইত্যাদি সহ নানাবিদ বিষয়। ইউকে হলো ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর সবচেয়ে বৃহৎ বানিজ্য অংশীদার। এটা ইউরোপের বৃহত্তম সিঙ্গেল মার্কেট। ইউকের মোট রপ্তানির প্রায় অর্ধেক(৪৫%) হয়ে থাকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে। EU এর সদস্য হওয়ার সুবাদে ইউকে কম মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী আমদানী, কমমূল্যে নানাবিধ সেবা জনগনকে দিয়ে আসছিল। বিশাল পরিমানে রপ্তানি বাণিজ্য করে আসছিল ইউ রাষ্টের সাথে। ভোটের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইউ থেকে বিদায় নিলে যে পরিমান ক্ষতি হতে পারে তা অকল্পনীয়। লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স এর সাম্প্রতিক রিসার্চ আর্টিকেল অনুসারে জনগন কি পরিমান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তার একটা আনুমানিক ডাটা নিচে দেওয়া হলো – যদিওবা এটা এক ধরনের prediction মাত্র। এর বাতিক্রম ও হতে পারে, নির্ভর করবে সরকারের দূরদর্শী পরিকল্পনার উপর।
Table 1: The effects of Brexit on UK living Standard
Optimistic
|
Pessimistic
| |
Trade effects
|
-1.37%
|
-2.92%
|
Fiscal benefit
|
0.09%
|
0.31%
|
Total change in income per capita
|
-1.28%
|
-2.61%
|
Income change per household
|
-£850
|
-£1,700
|
Optimistic
|
Pessimistic
| |
Brexit trade effects (from Table 1)
|
-1.37%
|
-2.92%
|
Fiscal benefit (from Table 1)
|
0.09%
|
0.31%
|
Unilateral liberalisation
|
0.30%
|
0.32%
|
Total change in income per capita
|
-0.98%
|
-2.29%
|
ব্রিটিশ জনগণ Brexit সিদ্বান্ত নেওয়ার পর থেকে সারা বিশ্বের শেয়ার মার্কেটের আনুমানিক ক্ষতির পরিমান $2.08 ট্রিলিয়ন। এটা এযাবৎ কালের বৃহত্তম ক্ষতি – যেটা কিনা ২০০৮ সালে লেইমান ব্রাদার্স এর ব্যাঙ্ক ক্রাফট হওয়ার পর কিংবা ১৯৮৭ এর ব্লাক মানডে স্টক মার্কেট ক্রাশ এর চেয়েও অনেক বেশি। Brexit মানে হল Britain Exit- means leave the Union.
ব্রিটিশ জনগণ কেন এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো সে নিয়ে সামান্য কিছু ধারণা দেয়া যেতে পারে। বিশেষ করে চেষ্টা করব গনতন্তের বিকাশে এবং মূল্যবোধ রক্ষায় ব্রিটিশ রাজনীতি, সরকার এবং সর্বোপরি জনগণ কতটুকু আন্তরিক তার একটা বিশ্লেষণ । আমরা এর থেকে কি শিখতে পারি।
কেন এই রেফারেন্ডাম?
গত ২৩শে জুন ইউকে এর জনগণ গণভোটে অংশ নিয়েছিলে – উদ্দেশ্য একটাই জনগনে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে থাকবে কি থাকবেনা সেই সিদ্বান্ত নেওয়া। ইংল্যান্ড এর জনগণ বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দেন। ভোটের অনুপাত ছিল বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে ৫৩.৪% এবং ইউ এর সঙ্গে থাকার পক্ষে ৪৬.৬%. ওয়েলস বের হওয়ার পক্ষে ৫২.৫% এবং থাকার পক্ষে ৪৭.৫%. স্কটল্যান্ড সঙ্গে থাকার পক্ষে ৬২% এবং বের হওয়ার পক্ষে ৩৮%, অপরদিকে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ৫৫.৫% সঙ্গে থাকার পক্ষে আর না থাকার পক্ষে ৪৪.৪%.
কেন এই ডিভোর্স? কারণ হলো, বিগত কয়েক বছর যাবত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কতিপয় সিদ্ধান্ত যেগুলো ব্রিটিশ জনগণের ইচ্ছের বিপক্ষে গেছে- বিশেষ করে ফ্রি মুভমেন্ট অব পিপল, ফ্রি মুভমেন্ট অফ ওয়ার্ক, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টই সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী সংস্থা এবং তাদের প্রণীত আইনই ইউ রাষ্ট্রসমূহের নিজস্ব আইনের উপরে অবস্থান করবে। মানে হলো ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিস যে সিদ্ধান্ত নিবে- মানে যে কোনো ইউ রিলেটেড ডিসপিউট এর ক্ষেত্রে সেটা নাগরিক, কাজ, অধিকার কিংবা বাণিজ্য যে কোনো বিষয়ে ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস এর সিদ্ধান্ত অবশ্যই প্রতিটি দেশকে মানতে হবে। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট প্রণীত সকল নীতিমালা মানতে হবে। মূল কথা হলো তাদের রায় ইউকের পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত যে কোনো সিদ্ধান্তেরও উপরে। সেটা ইউকে এর স্বার্থ বিরোধী হউক বা না হউক। অধিকন্তু ইউ এর বাইরে কোনো বাণিজ্য চুক্তি করতে গেলে সেটা তাদের নীতিমালা মেনে করতে হবে । যেটা অনেক সময় কঠোর নীতিমালার কারণে কঠিন ও ব্যয়বহুল হয়ে পরত। পলিসিগত কারণে ইউ এর সাথে এই দ্বন্দ্ব চলে আসছিল অনেক দিন ধরে । সংসদের কর্তৃত্ব(Parliamentary Sovereignty) বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। যদিওবা সিঙ্গেল মার্কেটের কারণে ইউকের অনেক সুবিধা ও লাভ হয়েছে। আসুন সিঙ্গেল মার্কেট বলতে তারা কি বুজায় ? মানে হচ্ছে- it allows the free movement of goods, services, money and people within the European Union, as if it was a single country. এই সুবিধার কারণে গত কয়েক বছরে ত্রিশ লক্ষ এর মত লোক সমগ্র ইউরোপ থেকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে। যেটার উপর ইউকে এর কিছু করার ক্ষমতা ছিলনা । কারণ তাদের প্রণীত ‘Free movement of People’, Free movement of work সংক্রান্ত আইনের উপর হাত দেওয়া যাবেনা। এই ট্রিটির আওতায় ইউকের জনগণ যে সকল রাষ্ট্রীয় সূজুগ সুবিধা ভোগ করবে ইউনিয়ন ভুক্ত রাষ্টের নাগরিকগণও ঠিক সমপরিমান সুবিধা ভোগ করবে। বিষয়টা মহৎ কিন্তু কোনো কোনো রাষ্টের জন্য সেটা হুমকি স্বরূপ। সমালোচকদের মতে ফ্রি এক্সেস সুবিধা সমূহ রক্ষা করতে গিয়ে ইউ এত বেশি নীতিমালা করেছিল -যার ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাষ্ট্রসমূহ এর নিজস্ব বেপারও তাদের ইচ্ছের উপর নির্ভর করত। ফলে ফ্রি মুভমেন্ট এর সুবাধে ইউরোপের দরিদ্র অংশ থেকে লক্ষ লক্ষ পরিবার ইউকে মুখী হয়েছিল। বিপুল জনগোষ্ঠী শুধুমাত্র পূর্ব ইউরোপ থেকে এসেছে তা নয় বরঞ্চ অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এমনকি ধনী দেশ ইতালি, স্পেন সহ অনেক ইউরোপিয়ান দেশ থেকে ও এসেছিল। এটা অবশ্যই ঠিক যে রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, লিথুনিয়া, স্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড এবং হাঙ্গেরি থেকে লোক এসেছে অনেক বেশি। শুধু গত দুই বছরে পূর্ব ইউরোপ থেকে প্রায় দশ লক্ষ লোক – অধিকাংশই পরিবার সমেত ইউকে প্রবেশ করেছে। এমনকি অনেক ল্যাটিন আমেরিকান স্প্যানিশ পাসপোর্ট নিয়ে মাইগ্রান্ট হয়েছে। ইংরেজি ভাষাগত সুবিধার কারণে অধিকাংশ মাইগ্রান্ট যুক্তরাজ্যকে বেছে নিয়েছে। তা ছাড়া কাজের সুবিধা, বাচ্চাদের লেখা পড়া, হাউজিং বেনেফিট, হেলথ বেনেফিট, উন্নত চিকিৎসা ইত্যাদি কারণে এই বিপুল সংখ্যক মাইগ্রেশন। অন্যান্য সুযোগ সুবিধা তো আছেই। ভবিষ্যতে পূর্ব ইউরোপের এমন অনেক দেশ আছে যেখানে কয়েক হাজার ইউরো খরচ করে সহজে পাসপোর্ট বানানো যায় সেই রকম পাসপোর্ট নিয়ে নন ইউ লোক আসবেনা তার কোনো গ্যারান্টি নাই। সেক্ষেত্রে ফ্রান্স, জার্মানি কিংবা ইতালির তুলনায় যুক্তরাজ্য ইউরো মাইগ্রান্ট এর সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। ইউকের জনগণ ধারণা করছিল আগামী ৫ বছরে আরো আনুমানিক ১০ লক্ষ লোক প্রবেশ করবে কিংবা তারও বেশি যদি তুরস্ক ইউ এর সাথে যোগ দেয় । ইতিমধ্যে প্রবেশ করা এই বিপুল সংখ্যক মাইগ্রান্ট এর প্রভাব ব্রিটিশ জনগণের উপর এত বেশি পরেছিল যে যার খেসারত তাদেরকে দিতে হয়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রে । যেমন সংখ্যাধিক্যের কারণে পছন্দের স্কুল কলেজে সুযোগ না মেলা, হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বিলম্বিত হওয়া, কাজের লোকের আধিক্যের কারণে চাকুরী পেতে কষ্ট হওয়া, কাজের পারিশ্রমিক কমে যাওয়া, ঘর ভাড়া অনেক বেড়ে যাওয়া, নিয়ম বহির্ভূত ভাবে কাশ ইন হ্যান্ড কাজ করা (মানে ট্যাক্স পে না করে) গণহারে বেনেফিট(সোশ্যাল সিকুরিটি বেনেফিট)নেয়া। মানে সব কিছু সিস্টেমের উপর ধীরে ধীরে এত প্রভাব ফেলা শুরু করলো যা ব্রিটিশ জনগণ হাড়ে হাডে বুজতে পারল। যদিও এটার যে একটা ভালো প্রভাব আছে যা অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করে তা সাধারণ জনগণ বুজতে পারে নাই । পারার কথাও নয় কারণ এটার কোনো লাভজনক প্রভাব জনগণের উপর পড়ে নাই । বরঞ্চ উপর্যপুরি বেনেফিট কাট জনগণকে হতাশ করেছে। কারণ হিসেবে জনগণ যা বুজেছে তা হলো এই বিপুল সংখ্যক ইউরোপিয়ান মাইগ্রান্ট এর কারনেই এই দশা ।বাড়তি লোকের কারনেই বেনেফিট সুবিধা দিন দিন কমে যাচ্ছিল । এই ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বেনেফিট প্রদানে ব্যর্থতা কিংবা বেনেফিট সুবিধা সংকুচিত করা ইত্যাদি যাবতীয় ক্ষেত্রে সরকারী ব্যর্থতা বিষয়টাকে অনেক বেশি প্রভাবিত করেছে। তাদেরই কারণে সরকার নন ইউরোপিয়ানদের(মূলত এশিয়ান এবং আফ্রিকান) প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে বাধ্য হয়েছে। এক পর্যায়ে নেট মাইগ্রেশন ১০০০০ নামিয়ে আনতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছিল। যে কারণে নন ইউ মাইগ্রেন্টদের অনেকে ব্রিটিশদের মতো বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিলো। ইউরোপিয়ানদের আগে নন ইউরোপিয়ানদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জনগণ অনাস্থা হিসেবে লেভার পার্টিকে হটিয়ে কনজারভেটিভকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। পরেরবার জনগণের মনের ভাব বুজে দ্বিতীয়বার নির্বাচনের পূর্বে কনজারভেটিভ পার্টি Referendum এর ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই সময় মাইগ্রান্ট নিয়ন্ত্রণের ইস্যুতে UKIP(Independent party)বেশ ভাল সমর্থন পেয়েছিল। সব মিলিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এ থাকা না থাকার বিষয়টা গুরুত্ব পাওয়ায় সরকার রেফারেন্ডামের এর ঘোষণা দিয়েছিল ২৩শে জুন, ২০১৬।
মজার বেপার হলো সরকারী দল এবং বিরোধী দল ইউরোপের সঙ্গে থাকার বেপারে একই মত পোষণ করেছিল। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল থাকার পক্ষে থাকলেও উভয় দলের বেশ কিছু প্রভাবশালী সংসদ সদস্য এর বিরুদ্ধে ছিল । তার মধ্যে লন্ডনের সাবেক মেয়র বরিস জনসন ছিলেন অন্যতম। এই বিষয়ে রাজনৈতিক দলের বেশ কিছু শীর্ষ নেতৃবৃন্দ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছিল। বিরোধী পক্ষের দুর্বল প্রচারণা শর্তেও Brexit গ্রূপ জয় লাভ করেছে । কেন জয় লাভ করলো, কেন বেরিয়ে গেল, কেন এত বড় রিস্ক নিল তার কিছু ধারণা উপরে দিয়েছি। মূলত ব্রিটিশ জনগণ কারো নিয়ন্ত্রণে থাকতে চায়না । ভালো মন্দ তারাই বুজে। দেখা যাক কি হয় ?
এবার দেখা যাক জনগণের মতামতের মূল্যায়ন কিভাবে হয়? সরকার চাইলে নির্বাচনের রায়কে চরমভাবে প্রভাবিত করতে পারতো। যেখানে বিরোধী দল এবং সরকারী দল একই মত পোষণ করে- সে ক্ষেত্রে চাইলে অনেক কিছুই সরকার করতে পারত, মানে কারচুপি। কিন্তু সেটা করে নাই। বরঞ্চ জনগণের সত্যিকারের মতামত পাওয়ার জন্য যতটুকু সম্ভব নিরপেক্ষ ছিল । পরবর্তীতে ইউরোপ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পক্ষ বিজয়ী হওয়ায় ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন । এই বিষয়ে প্রধান মন্ত্রীর বক্তব্য হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকজন আমার মতামত বা ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়েছে সুতরাং আমার ক্ষমতায় থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এই বিষয়টা আমাদের জন্য আরেকটা বড় ধরনের শিক্ষণীয় বিষয়। সুস্থ ও বলিষ্ঠ গনতন্তের চর্চায় এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না । আমি মনে করি এই কারণে তার উপর জনগণের শ্রদ্ধা অনেক বেড়েছে এবং তার দলের ভাবমূর্তিও অনেকাংশে বাড়বে বলে আমি মনে করি। লক্ষণীয় বিষয় হলো ডেভিড ক্যামেরুন ক্ষমতা থেকে বিদায় না নিলে আইনত কোনো বাধা ছিলনা। যতক্ষণ পর্যন্ত সংসদে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করা না হত ততদিন তার ক্ষমতায় থাকার পক্ষে কোন সমস্যা নেই । আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলের নেত্রী দয়া করে একটি সুন্দর গনতন্তের জন্য আসা করি অনুকরণ করবেন ।
এবার আসুক জনগণের বিষয়ে – জনগণ তাদের জন্য কোনটা কল্যাণ বা মঙ্গল সেটা তারা বেছে নিয়েছে.। এখানে দল, নেতা কোনও কিছুই কাজ করে নাই । তাদের জন্য কোনটা ভালো তারা সেটাই বুজেছে । মানে সত্যিকারের দেশ প্রেম তাদের মধ্যে কাজ করেছে.। ব্রিটিশ জনগণ ভুল করেছে নাকি শুদ্ধ করেছে সেটা এই মুহুর্ত্তে বলা খুব কঠিন.। যতটুকু বুজলাম বের হয়ে যাওয়া পক্ষের ভোটারদের অধিকাংশই ত্রিশ ঊর্ধ্ব থেকে সত্তর। এর মানে হলো এরা বুজে শুনে এই কাজটি করেছেন । আবেগ তাড়িত হয়ে নয়। ইউরোপের সঙ্গে থাকার জন্য এত প্রচারণা শর্তেও ব্রিটিশ জনগণের প্রায় ৫২% বিপক্ষে ভোট দিয়েছে.। মানে এর পিছনে বিশাল কোনো কারণ আছে।
যদি এটা তাদের সুদূর প্রসারী চিন্তার ফসল হয়ে থাকে তবে আমি মনে করি আগামী এক বছরে এই ধাক্কা তারা কাটিয়ে উঠতে পারবে এবং অর্থনীতি আরো বেশী সুদৃঢ় হবে । সেটা হবে দীর্ঘ মেয়াদী । তাদের কাছে এখন সারা বিশ্ব উম্মুক্ত বাণিজ্যর জন্য । মাইগ্রেশন এখন তাদের প্রয়োজন মত নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে । অধিক পরিমান অর্থ তাদরে স্কুল, হাসপাতাল এবং জনগণের জন্য ব্যয় করতে পারবে । যার পরিমাণ কম করে হলেও ২০ বিলিয়ন পাউন্ড। এটাও ঠিক আগামী নেতৃত্বকে অনেক বেশি যুগোপযোগী এবং চ্যালেন্জিং হতে হবে । আমার বিশ্বাস তারা সেটা করতে পারবে। কারণ নিজেদের কল্যাণের জন্য যে বিসর্জন এবং রিস্ক তারা নিয়েছে আমি মনে করি তারা সেটা কাটিয়ে উঠতে পারবে।
সব কথার সার কথা হলো জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। জনগণের খুশি এবং কল্যাণই হোক রাষ্টের লক্ষ্য। আমাদের সরকার এবং বিরোধী দলকে ক্ষমতা লোভী না হয়ে গনতন্তের জন্য, একটি সুন্দর রাষ্টের জন্য অনেক বেশি ত্যাগী হতে হবে । বর্তমান সরকার ভালো করছেন এবং আগামী ২০৪১ এর মধ্যে দেশকে উন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান।এটা আমাদের জন্য ভালো খবর কিন্তু সেটা মুখে বললে তো হবেনা । শুধু ব্যাহ্যিক উন্নয়ন হলে চলবেনা –তখন সেটা হবে ভঙ্গুর অর্থনীতি। আমদের গণতন্ত্রকে একটা শক্ত ভিত্তি দিতে হবে । বিচার ব্যবস্থাকে নিরপেক্ষ করতেই হবে। মানে স্বাধীন নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা লাগবেই । আইনের শাসন যে কোনো মূল্যে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নিরপেক্ষ বিচারের সুজুগ ধনী গরিব নির্বিশেষে জনগনের দোরগোড়ায় পচিয়ে দিতে হবে । দুর্নীতিকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে । নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন করতেই হবে । সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ এর উপর থাকতে পারবেনা। গনতন্তের একটা সুদৃঢ় মজবুত ভিত্তি ছাড়া এইসব লোক দেখানো উন্নয়ন ঠিকে থাকবেনা । যদিও উন্নয়ন এর লক্ষ্য মাত্রার কাছাকাছি গেলেও এটা ঠিকে থাকবেনা । সেটা হবে ভঙ্গুর অর্থনীতির মত ।লুটেরা বুর্জুয়ারা লুটে পেটে সব খেয়ে ফেলবে । গণতন্ত্রের কাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়া এইসব লোক দেখানো বাহ্যিক উন্নয়ন কখনই স্থায়ী রূপ লাভ করবেনা। যথা সময়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সুষ্ট নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে । পারিবারিক রাজনীতি পরিহার করতে হবে । যোগ্য লোককে নেতৃত্বের সুজুগ দিতে হবে ।
মোহাম্মদ আলী রেজা
লন্ডন